সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বন্যার কারণে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন এ ইউনিয়নের বানভাসি কয়েক হাজার মানুষ।

গতকাল রবিবার (১৪ জুলাই) থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও উজান থেকে নেমে আসা ঢল অব্যাহত রয়েছে।

ইতোমধ্যে ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। ইসলামপুর, সুনাতনপুর, অনুচন্দ, বুধরাইল, মোরাদাবাদ, তেগরীয়া, সৈয়দপুর, গোয়ালগাও, নোয়াপাড়া, হাড়িকোনা, কুড়িহাল, টলাখাল আহমদাবাদ, নোয়াগাও, ফতেপুর, করিমপুর, পীরেরগাঁও, কুড়িকেয়ার গ্রাম ও সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ১৬টি গ্রামের রাস্থা ঘাট ও বাড়ি ঘর তলিয়ে গেছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে দূর্ভোগে আছেন কয়েক হাজার মানুষ। হঠাৎ পানি বাড়ায় ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ শতাধিক পুকুরের লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুনাতনপুর টলাখাল ও আহমদাবাদ গ্রাম কোমরপানি, বুকপানি থাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্তিতিতে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্বীয় স্বজনদের বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে আর কেউ কেউ আগেই সিলেট শহরে চলে গেছেন। ভবেরবাজার-সৈয়দপুর-শাহারপাড়া-তিলক-কাঠালখাই-নয়াবন্দর প্রধান প্রধান সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদর ও সিলেট শহরের সঙ্গে সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নবাসীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় এ ইউনিয়িনের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বনামধন্য চেয়ারম্যান তৈয়ব কামালী সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের ইউনিয়নে ষোলটি গ্রামের প্রায় দশ হাজার মানুষ পানি বন্ধি। আর ভবেরবাজার থেকে সৈয়দপুরের রাস্তা ও সৈয়দপুর থেকে কাঠালখাইর - নয়াবন্দর সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় জগন্নাথপুর উপজেলা সদর ও সিলেট টাউনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পানি বেড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার, জিআর’র চাল, ডাল, নুডলস, সয়াবিন তেল, লবণ, চিনি, কলস, মগ, বদনাসহ বিভিন্ন  ত্রাণসামগ্রী বিতরণ সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পানি বিশুদ্ধিকরণ বড়ি, প্যারাসিটামল বড়ি ও খাবার স্যালাইনসহ বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিতরণের কথা থাকলেও এসব গ্রামে এখনো কিছুই পৌঁছায় নি।

এদিকে জগন্নাথপুরের অবহেলিত গ্রাম হিসাবে খ্যাত ইসলামপুর সহ সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের সব প্লাবিত গ্রাম অচিরেই দুর্গত এলাকা ঘোষণাসহ পানি হ্রাস না হওয়া পর্যন্ত ইউনিয়নের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে বন্যার্তদের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বানভাসি মানুষজন।

সোমবার (১৫ জুলাই) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জগন্নাথপুরের এসিল্যান্ড ইয়াসির আরাফাত জগন্নাথপুরের একটি অনলাইন পত্রিকাকে বলেন, সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের বন্যার খবর আমি জানি না। তিনি জানান, জগন্নাথপুরের আট টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচ টি ইউনিয়নে প্রায় ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন কিন্তু সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের বন্যার খবর পাই নি আর জগন্নাথপুর পৌরএলাকাগুলো এখনও বন্যা কবলিত কিনা আমরা যাচাই করেনি। সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের বন্যার কোন খবর আমার কাছে আসেনি। তিনি আরো বলেছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে এখন পর্যন্ত ষাট মেট্রিকটন চাল ও সাড়ে সাত শত শুকনো খাবারের প্যাকেট আমাদের কাছে পৌছেছে। আমরা প্রতিদিন বন্যা আক্রান্তদের ঘরে ঘরে গিয়ে তা দিচ্ছি। জগন্নাথপুরের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হয়েছে।

একটি মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন